মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকাল সোয়া ৯টায় বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর ছিল ইরাকের বাগদাদ। তারপরই জায়গা করে নেয় কুয়েত সিটি। কিন্তু শহরদুটির দূষণের মাত্রা দেখলে চোখ কপালে ওঠার মতো।

সাধারণত বায়ুদূষণের সূচক (এইকিআই) ১৫১ থেকে ২০০ হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে ৩০০-র বেশি যেকোনো সূচক।

অথচ বাগদাদের একিউআই সূচক ছিল দ্বিগুণেরও বেশি। ওই সময়ে ৭৫৮ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার শীর্ষে ছিল শহরটি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কুয়েত সিটির অবস্থাও নাজুক, এই শহরের দূষণের সূচক ছিল ৫৭৭। এর আগে, এ বছরের ১৫ মে একই ধরনের বিপর্যয় দেখা গিয়েছিল বাগদাদে। সেদিন সকালে শহরটির দূষণের মাত্রা ছিল আজকের চেয়েও বেশি, ১০৯২।

এই সময় মধ্যপ্রাচ্যের এই দুটি শহর ছাড়া বিশ্বের অন্য শহরগুলোর পরিস্থিতি স্বাভাবিকই ছিল। এর মধ্যে তালিকার তৃতীয় দূষিত শহর কঙ্গোর কিনশাসার একিউআই সূচক ছিল ১৭৮ এবং চারে থাকা চিলির সান্তিয়াগোর সূচক ছিল ১৫৫।

তবে একটি বিষয় গত কয়েকদিন ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে। তা হলো, কমবেশি বৃষ্টির কারণে বেশ কিছুদিন বায়ুদূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় ঢাকাকে তো দেখা যাচ্ছেই না, এমনকি ভারতের দিল্লিকেও মাঝেমধ্যে তালিকার বেশ নিচে অবস্থান করতে দেখা যায়। কিন্তু প্রতিদিনই শীর্ষ পাঁচ দূষিত শহরের মধ্যে জায়গা করে নেয় পাকিস্তানের লাহোর। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১৫৫ একিউআই স্কোর নিয়ে এই সময় লাহোরের অবস্থান ছিল পঞ্চম স্থানে।

গত তিন দিন থেকে একটু একটু করে অবনতি লক্ষ করা যাচ্ছে ঢাকার বায়ুমানে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আজ সকালে ঢাকার একিউআই স্কোর ছিল ৯০, যা ‘মাঝারি’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত। গতকাল সকালে এই স্কোর ছিল ৭৭, তার আগের দিন (রবিবার) তা ছিল ৭৯। এ ছাড়া শনিবার সকালে ঢাকার বাতাসে দূষণের সূচক ছিল ৫৯।

অন্যদিকে, গত কয়েকদিন তালিকার শীর্ষস্থানে না থাকলেও দশ থেকে ২০তম স্থানের মধ্যে দেখা যায় দিল্লিকে। আজ সামান্য অবনতি হয়েছে শহরটির বাতাসের, তবে ঢাকার চেয়ে আজ দিল্লির বায়ুমান কিছুটা ভালো। ৮৬ একিউআই স্কোর নিয়ে ঢাকার ঠিক পরেই, অর্থাৎ দ্বাদশ স্থানে ছিল শহরটি।

কণা দূষণের এই সূচক শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা ‘ভালো’ শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। তারপর থেকে ১০০ পর্যন্ত একিউআই স্কোর ‘মাঝারি’। একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।

ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।